জলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের করুন জীবন চিত্র
আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রধান কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবনের চিত্র উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। বুকে জমে রাখা হাজারো স্বপ্ন বিলীন হয়ে যাচ্ছে নিমেষে। পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বীকার হওয়া মানুষের জীবন পথ। দিন যাচ্ছে রাত আসছে জীবনের স্বপ্ন গুলো যেন ছোট হয়ে আসছে। একটাই সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন। তাই এ পর্বে আলোচনা করতে যাচ্ছি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া এক নারী রুমা মন্ডা। চলুন তার জীবনের গল্প শুনি।
শিরোনামঃ জলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের করুন জীবন চিত্র পর্ব ৩
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার অন্তর্গত জেলেখালি গ্রামের মুন্ডা পাড়ার বসবাসকারী রুমা মন্ডা ।তার বাবার বাড়ি সবচেয়ে নিম্ন উপকূলীয় অঞ্চলে কয়রা জেলার জড়সিং গ্রামে । বাবা গরীব থাকায় তাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। আরেকটি উপকূলীয় অঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার কৈখালী গ্রামে। তার বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। সেখানে এক বছর খুব ভালোই গেল । জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০০৯ সালে হঠাৎ এসে পড়ল প্রলয়নকারী ঘূর্ণিঝড় আয়লা । এই আয়লায় হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু তাদের জীবন রক্ষা পেলেও রক্ষা পায়নি বসতভিটা, সম্পত্তি। সবকিছু নদীর ভাঙ্গনে নিয়ে চলে গেলো। বসবাসের মতো সামান্য জায়গাটুকুও ছিল না।
অনেকদিন তারা সেই পানির উপরে বাসা বেঁধে বাস করছিল। কিন্তু বাচ্চা নিয়ে থাকা সেখানে নিরাপদ নয় ভেবে তারা প্রথমে একটু দূরে রাস্তার উপরে যে ছোট্ট একটা ঘর কাগজ দিয়ে বেঁধে বাস করছিল । কিন্তু সেখানে মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয় । সেজন্য সেখানে আর বেশি দিন তাদের থাকা হয়নি। তাদের বসবাসের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা শ্যামনগর ক্লিনিক মোড়ে খাস জমিতে এক জায়গায় বসবাস করার মতো একটা জায়গা দেখিয়ে দেয় । এখানে তারা বসবাস করতে থাকে। তাদের জীবনটা ছিল ছিন্ন মেঘের মতো। কয়েক মাস পরে তাদের সেখান থেকে তুলে নিয়ে জেলেখালি একটা খাস জমিতে তাদের বসবাস করতে দেওয়া হয়। অনেক জায়গা স্থানান্তর করার পর তারা জেলেখালি গ্রামে বসবাস শুরু করে। তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে অনেক সমস্যা ,অনেক নির্যাতন ও অপমানিত লাঞ্ছিত হয়েছেন। হয়তো মুখে প্রকাশ করার মতো না। তাদেরকে নিচু জাত বলে অপমান করা হতো। কোন কাজে তাদেরকে নেওয়া হতো না।
পরে বিভিন্ন সমস্ত থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পেরে তারা এখন অনেকটা সচেতন হয়েছে। এখন তাদের সবাইকে কাজে নেয় বা সমাজের সম্মান দেয়। এখানে এসে আবারো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আম্পান ঝড় এসে তাদের বাড়িঘর সব ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সেই ঝড়ে বেসরকারি সহযোগিতা সংস্থা আর তারা কিছু দিয়ে ঘর মেরামত করে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের আয়ের উৎস কম থাকায় তারা সচ্ছলভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া পরিবারের সমস্ত ব্যয়বহন করা এই সামান্য আয়ের দ্বারা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সকল দিক থেকে তাদের আয়ের উৎস কমে গেছে। ফলে তাদের দারিদ্রতার অনলে বসবাস করতে হচ্ছে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলে বাড়ি তে বসে সংসারটা একটু ভালো হবে চালাতে পারতো বলে তিনি মনে করেন। তবে সেটা যেন সে বাড়িতে বসে করতে পারে। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে লোনা পানিতে কাজ করার ফলে তার জরায়ুতে মারাত্মক ইনফেকশন হয়ে আছে ।যা তার কর্মজীবনের জন্য অনেকটা ঝুঁকি।
পরিশেষ একটা কথাই বলতে হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা চালানো খুবই কঠিন। প্রতিটি পরিবার রয়েছে এক একটি করুন ইতিহাস। যা শুনলে আপনি থমকে যাবেন। এভাবেই তারা জীবন জীবিকা পরিচালনা করে থাকে একটু ভালো জীবন পাওয়ার জন্য। ভালো হবে থাকার জন্য ভালোভাবে খাওয়ার জন্য। বন্ধুরা আজ এখানে শেষ করছি আজকের আর্টিকেল। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url