জলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের করুণ জীবনের গল্প পর্ব ০২
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে আলোচনার প্রধান একটা কেন্দ্রবিন্দু। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ভৌগোলিক অবস্থান, পাল্টে যাচ্ছে জনপদের গতিপথ। এ ধারা যদি এভাবে অব্যাহত থেকে যায় তাহলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলো। হতে পারে বিভিন্ন দেশের এক বিরাট অংশ ডুবে যেতে পারে সমুদ্রের গভীর তলদেশে। এসব থেকে আমাদের বাঁচতে হলে সারা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপেক্ষিতে আজ একটি জীবনের গল্প নিয়ে এলাম।
শিরোনামঃজলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জীবনের গল্প পর্ব ২
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের খোল পেটুয়া নদীর তীরে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার বুড়ি গোয়ালনী গ্রামে বসবাসরত বিধবা অসহায় নারী তমা দাস । তার জীবনটা অনেক কষ্টের। খুলনা শহরে তার বাবার বাড়ি হলেও নিজের পছন্দমত বিয়ে করে আসছিলেন উপকূলীয় অঞ্চলে। সেখান থেকে শুরু হল তার জীবন সংগ্রাম। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মত শত চেষ্টা করলেও হেরে গেলেন। তিনি ধরে রাখতে পারেননি তার স্বাস্থ্য কে, ধরে রাখতে পারেননি তার ফুটন্ত ত্বককে। অন্য দিকে তার ভিতরে ভিতরে সমস্যা হচ্ছে সে বুঝে উঠতে পারেনি। এই সমস্যার মধ্যে তার বাচ্চা কনসিভ করে । সেটাও সে জানে না। দেড় মাস পর যখন ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলে, তার বাচ্চা কনসিভ করার পর নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধ খেতে খেতে আবার দুই মাসের মাথায় আবার সে তার নাড়ির ভিতরে কনসিভ করে ডাক্তারের কাছে গেলে এটা কে অক্টোপিক বলে। এ বাচ্চা রাখা যাবে না রাখলে সমস্যা হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।
সেখান থেকে এক বছর পর আরেকটি বাচ্চা কনসিভ করে। আবারো সেই একই ভাবে দেড় মাসের মাথায় ব্লিডিং শুরু হয়, তখন তিনি আবারও ডাক্তারের কাছে যায়।ডাক্তার তাকে রেস্টে থাকতে বলে এবং তাকে কিছু ওষুধ দিয়ে দেয়। সেখান থেকে কয়েক মাস পর অপারেশন করে দেখা গেছে তার জরায়ুতে একটা নয় অনেকগুলো ছোট ছোট টিউমার হয়েছে। ডাক্তার বলল যে এখন এটা অপারেশন করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অর্থের অভাবে ভালোভাবে চিকিৎসা নিতে পারেননি সেখান থেকে ১৮ মাস পর আবার আরেকটি বাচ্চা কনসিভ করে। তখন সে ভাবছিল জরায়ু কেটে ফেলবে। তখন ডাক্তার বলল সে আর কখনো বাচ্চা নিতে পারবে না এবং সংসারে অশান্তি হবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। তখন সে আর অপারেশন করল না যে ওষুধ খেয়ে দেখি ভালো হয় কিনা এইভাবে সে ওষুধ খেতে থাকে। এভাবেই একটি বাচ্চার জন্ম হয়।
তার এই এতগুলো সমস্যা বা জরায়ুর এই সমস্যা মারাত্মক কঠিন আকার ধারণ করেছে লোনা পানির কারণে। তার স্বামী ও একটা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সেটা হল কিডনির সমস্যা ও প্রস্রাবে ইনফেকশন। তার ছেলের বয়স যখন দেড় মাস তখন তার স্বামী হঠাৎ একদিন প্রস্রাব বন্ধ হয়ে মারা যান। এই রোগের মুখোমুখি হয়েও আরেকটি শোকের ছায়া নামল তার জীবনে। সেখান থেকে তিনি অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে আসছেন। তার শশুর শাশুড়ি এখন তার সাথে খুব দুর্ব্যবহার করে। তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায় আর বলে তোর বাচ্চা দুটো নিয়ে তুই বের হয়ে যা। আমরা আর খেতে পারছি না তো তোদের খেতে দেবে কে।
সে একজন এমএ পাস নারী থাকা সত্ত্বেও বাইরের কাজ করতে পারছে না। সম্মানের ভয়ে যে সে এমএ পাস করেও জন মজুরি দিয়ে খাচ্ছে। তাছাড়া তার বাচ্চা দুটো ও এখনো ছোট এজন্য শশুর শাশুড়ি নির্যাতন তাকে মেনে নিতে হচ্ছে। এমন কি সে বাড়িতে বাড়িতে টিউশনি করতো। সেখানে তাদের বাড়িতে যে নিষেধ করে আসে তোমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠাবে না। ওদের জন্য দুপুরে একটু ঘুমাতে পারি না। আর তাকেও বাড়ির বাইরে যেতে দেয় না। খুব কষ্টে তার দিনগুলো কাটে এভাবেই। এত পড়াশোনা জেনেও কতটা অসহায় একবার ভেবে দেখলে রক্ত হিম হয়ে যায়। এভাবেই কত তমা দাস বাংলার আনাচে কানাছে পড়ে আছে তা হয়তো আমাদের চোখে দেখা যায় না। আমাদের সমাজের মানুষও এগুলো দেখে ও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলে। আমরা সবাই যদি একটু সচেতন হই তাহলে এমন ভাবে তমা দাসের গল্প শুনতে হতো না।
পরিশেষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিত। হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের আশেপাশে কেউ এভাবে বিপদে পড়লে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। এগিয়ে আসুন। পাশে দাঁড়াই কষ্টে থাকা মানুষগুলোর জীবন সংগ্রামে। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। নিরপদে থাকুন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকুন।ধন্যবাদ সকলকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url