মুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
মুলা একটি বহুল পরিচিত শীতকালীন সবজি। মুলা সবজিটি সম্পর্কে কারোর অচেনা ও অজানা নেই। গ্রাম বাংলায় যে কৃষক বাসা বাড়িতে অন্যকোন সবজি না লাগালেও তার ক্ষেত খামারে মূলা সবজিটা বিদ্যমান থাকে । মুলা সবজিটা লাগাতে হলে খুব বেশি পরিশ্রমের দরকার হয় না। মুলা সবজিতে রয়েছে গুণাগত পুষ্টিমান ও ভিটামিন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অজানা কিছু ।
পেজ সূচিপত্রঃ মুলার উপকারিতাও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য।
- মুলা কি
- মুলার উৎপত্তি
- মুলার গুণগত পুষ্টিমান
- মুলার উপকারিতা
- মুলার অপকারিতা
- শেষ কথা
মুলা কিঃ মুলা একটি পরিচিত সবজি । এটি শাকসবজি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং অন্যান্য পারিবারিক জাতের মত বৈশিষ্ট্যযুক্ত তেল আছে যা তীব্র গন্ধ সৃষ্টি করে। পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন জাতের মুলা রয়েছে। মুলা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। এছাড়াও বড় ,ছোট, মাঝারি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এটি একটি গন্ধ জনিত খাবার হলেও এখানে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
মূলার উৎপত্তিঃ মুলার উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন উন্নত জাতের মুলা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো লাল ,সাদা ,ছোট, বড় ,গোলাকার ,লম্বা ,হালকা বিভিন্ন বৈচিত্র্যের হয়ে থাকে।
মূলার গুণগত পুষ্টিমানঃ মূলা শব্দটি অনেকেই পছন্দ করে আবার অনেকেই করে না । এটির মূল কারণ হলো এখানে আছে একটি তীব্র গন্ধ । যেটা অনেকে সহ্য করতে পারে আবার অনেকে পারেনা । কিন্তু এর গুণগত পুষ্টিমানের দিকে তাকালে সব তীব্র গন্ধ কে উপেক্ষা করে আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। আজ জানবো প্রতি ১০০ গ্রাম মূলার পুষ্টিমান।
প্রতি ১০০ গ্রাম মূলায় যা যা আছে--
ক্যালোরি ১৬ গ্রাম, সোডিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৩৩ মিলিগ্রাম ,প্রোটিন ০.৭ গ্রাম, ভিটামিন সি 24%, আয়রন 1% ,ভিটামিন বি ৬ ৫%, ম্যাগনেসিয়াম ২% এছাড়া এখানে ভিটামিন ও খনিজ বিদ্যমান আছে।
মূলার উপকারিতাঃ মুলা একটি গন্ধ যুক্ত খাবার হলেও এর উপকারিতা অনেক। আজ আমরা মুলার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ মূলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যেটা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে । বিশেষ করে কিডনি, ক্ষুদ্রান্ত , পেট এবং মুখের ক্যান্সারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসাই এটি খুবই কার্যকরী।
মুত্র রোগ প্রতিরোধেঃ মূত্র রোগ প্রতিরোধ মুলার পাতা খুবই কার্যকর। মুলার পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ,ভিটামিন সি এর পাশাপাশি ক্লোরিন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি এটি পেটের জন্য খুবই ভালো।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে মুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমাতে চাইলে মুলা খাওয়া শুরু করতে পারেন। এখানে আছে বেশি পরিমাণ ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে । ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে । তাই ওজন কমাতে চাইলে মুলা খাওয়া শুরু করুন।
বাতের ব্যথায় মুলাঃ মুলা তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় দেহে ফ্রী রাডিক্যাল গুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। ভিটামিন সি কোলেজেন গঠনের সহায়তা করে। এটি আমাদের দেহে , কারটিলেস তৈরি করে। এভাবেই মুলা বাতের মত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে মূলাঃ এটি রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ হ্রাস করে। মুলা রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত না করে সঠিক মাত্রায় রাখে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
শ্বাসকষ্ট ব্যাধিগুলোতেঃ মুলা নাক ,গলা ,ফুসফুস জ্বালার রোধ করতে সহায়তা করে। এই জ্বালা মূলত সর্দি, অ্যালার্জি বা অন্যান্য কারণে হয়ে থাকে। মুলা শ্বসনতন্ত্রকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
মূলার অপকারিতাঃ মুলার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিত রয়েছে। সেটি হল আমাদের পরিমাণ মতো খেতে হবে । আবার বিভিন্ন রোগের উপর নির্ভর করে এটি খেতে হবে। কিছু কিছু রোগ আছে যেখানে এর সবজিটি খেলে উপকার নয় বরং অপকারিতাই বেশি হয়। তাই আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে হবে। মূলের অপকারিতা সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় নিম্নে দেওয়া হল।
হাইপোটেনশনঃ এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। যারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তারা মুলা খাওয়ার বিষয়টি চিকিৎসক এর সঙ্গে পরামর্শ করে খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণ মুলা খাওয়াটা রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে।
ডিহাইডারেশন ঃ মুলা খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণ প্রস্রাব হয়। শরীর থেকে অনেক জলে বেরিয়ে যায়। এজন্য মুলা খেলে বেশি পরিমাণ জল খাওয়া উচিত। সে দিক থেকে বলা যায় পরিমাণ মতো এসব সবজিটি খাওয়া প্রয়োজন।
ব্লাড সুগারঃ যাদের ব্লাড সুগারের সমস্যা আছে তাদের জন্য মূলা খাওয়াটা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আয়রনঃ যদি আপনার শরীরে আয়রন আছে, আর আপনি প্রচুর পরিমাণে মুলা খাচ্ছেন, তাহলে সতর্ক হোন। শরীরের বেশি পরিমাণ আয়রন থাকলে মুলা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে পেট ব্যাথা মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব লিভার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া রক্তে সুগার কমে যেতে পারে।
শেষ কথাঃ পরিশেষ বলা যায় যে সঠিক পরিমাণে মুলা খাওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় উপকার থেকে অপকারটাই বেশি হয়ে দাঁড়াবে। কিছু কিছু ব্যাধির জন্য এটি না খাওয়াই ভালো এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকবেন । সকলকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url