ভাই ফোঁটা কি এবং কেন জানুন বিস্তারিত ২০২৩
সবাইকে জানাই ভাতৃদ্বিতীয়ার শুভেচ্ছা। শুরু করছি ভাইফোঁটা সম্পর্কে কিছু অজানা কথা।ভাইফোঁটা কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে কালীপুজোর দুই দিন পর এই বিশেষ উৎসব পালন করা হয়। ভাইফোঁটা বাঙ্গালীদের এক চিরন্তন সম্প্রীতির উৎসব। দীপাবলীর দুইদিন পরে ভাইফোঁটা আসে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইকে তিলক করে এবং ভাইকে দীর্ঘায়ুর জন্য হাতজোড় করে যমরাজ এর কাছে প্রার্থনা করে । স্কন্দ পুরানে লেখা আছে যে, এই দিনে যমরাজকে প্রসন্ন করলে উপাসক কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করেন। তাই প্রসঙ্গ দীর্ঘায়ু না করে আমরা জানবো ভাই ফোঁটা সম্পর্কে জানা অজানা কিছু কথা।
ভাইফোঁটা কি এবং কেন জানুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত ২০২৩ঃ
- ভাইফোঁটা কি
- ২০২৩ সালের ভাইফোঁটা কোন দিন
- ভাই ফোটার ধর্মীয় তাৎপর্য
- যম ও যমুনার গল্প
- ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপখ্যান
- ভাই ফোঁটা পালন করার নিয়ম
- শেষ কথা
ভাইফোঁটা কিঃ ভাই ফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়া এটি সনাতনী দের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এটি কার্তিক মাসের শুক্লা তিথিতে কালী পূজার দুই দিন পরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয় সামাজিক উৎসব ও বটে । ভাইয়ের শুভ মঙ্গল কামনায় বোন তার কপালে টিকা দিয়ে থাকে তাই একে আবার ভাই টিকাও বলা হয়।
২০২৩ সালের ভাইফোঁটা কোন দিনঃ পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের ১৪৩০ সালের ২৮ কার্তিক বা ২০২৩ সালের ১৫ই নভেম্বর রোজ বুধবার এ উৎসব পালন করা হবে।
ভাইফোঁটার ধর্মীয় তাৎপর্যঃ সনাতন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভাইফোঁটা উদযাপনের তাৎপর্য রয়েছে । ধর্মগ্রন্থ অনুসারী কার্তিক মাসে শুক্লা দ্বিতীয়া দিনে যমুনা তার ভাইকে যমের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মানোর জন্য বর পেয়েছিলেন যার কারণে ভাইফোঁটা যম দ্বিতীয়া নামে ও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে যমরাজের বর অনুসারে যে ব্যক্তি এই দিনে যমুনায় স্নান করে যমের পূজা করবে , তাকে মৃত্যুর পর যম লোকে যেতে হবে না। তার ভাই অকাল মৃত্যুতেও রক্ষা পাবে। আজও বোনেরা ভাইদের কল্যাণার্থে দীর্ঘায়ু কামনা করে ভাই ফোঁটা দেন। ভাইফোঁটা নিয়ে রয়েছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী।
যম ও যমুনার গল্পঃ সূর্য ও সঙ্গার সন্তান যম ও যমি বা যমুনা। পুত্র ও কন্যা জন্ম দানের পর সূর্য উত্তপ্ত সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে সংজ্ঞা চলে যায় । ছায়ার কাছে মানুষ হয় যম ও যমুনা। একসময় যমুনার বিয়ে হয়ে যায় । বিয়ের পর যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা । দীর্ঘদিন দেখা হয় না ভাই বোনের। কথিত আছে যমুনা নিজের ভাই যমকে একাধিকবার নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ধর্মরাজ যম নিজের বোনের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে পারতেন না। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে বাড়ির ধারে নিজের ভাই যম কে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। যমি সেই তিথিতে ভাইকে ভাইফোঁটা দেন এবং ভোজন করান।
যমুনা এরপর যমিকে বর চাইতে বলেন ,তখন যমুনা ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা নেন যে প্রতিবছর কার্তিক মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে যেন তার বাড়িতে আসে এবং যমুনার জলে স্নান করে যাতে মুক্তি পাই এমন বর চেয়েছিলেন। যমরাজ বোনের এই ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন কিন্তু পাশাপাশি সতর্ক করেছিলেন, যে ভাই বোনকে তিরস্কার বা অযত্ন করবে তাকে যম পাশে বেধে নিয়ে যাবেন যমালয়ে। তবে ভাই যদি যমুনার জলে স্নান করে সূর্যকে অর্ঘদান করেন তাহলে তাকে স্বর্গলোক নিশ্চিত হবে। এই দিন ভাই বোনের যমুনা স্নান করা শুভ মনে করা হয়। মৃত্যু দেবতা যমকে সন্তুষ্ট করার জন্য ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে এ পূজা করা হয়।
ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপখ্যানঃ শোনা যায় ধন ত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে তার বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয় তিলক পরিয়ে দেন সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাই ফোঁটা উৎসব পালন করা হয়।
ভাইফোঁটা পালন করার নিয়মঃ এই দিনে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে পরিধান করতে হয়। তাছাড়া এদিনে ভাই ও বোন তারা একে অপরকে নতুন বস্ত্র প্রদান করে থাকে। তারপর সুতির আসনে ভাইকে বসিয়ে শুরু করা হয় ফোটা দেওয়ার অনুষ্ঠান। কাঁসা বা পিতলের থালায় ধান ,দুর্বা, আম পাতায় পাড়া কাজল সাজিয়ে রাখা হয় ভাইয়ের সামনে সঙ্গে থাকে ভাইয়ের পছন্দমত বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি।
এরপর বোনেরা বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে কাজল নিয়ে এঁকে দেয় ভাইয়ের ভুরু যুগলে। এরপর ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোটা দেওয়ার পালা । ফটো দেওয়ার সময় ছড়া কাটে বোনেরা। অঞ্চলভেদে তা বিভিন্ন ধরনের ছড়া আছে তা হলো,
এভাবে মুখে বলে আর কপালে ফোঁটা দেয় । ফোঁটা দেওয়ার পর শঙ্ক ধ্বনির মাঝে ধান দূর্বা দিয়ে ভাইকে আশীর্বাদ করে। তারপর মিষ্টিমুখ করার পালা আর এভাবেই গ্রাম-বাংলা, শহরতলীতে পালিতে হয় ভাই বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব ভাই ফোঁটা।
শেষ কথাঃ বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয় এ উৎসব । কিন্তু আজ তুলনামূলকভাবে এ উৎসব কম পালন করা হয়। এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাই বোনের সম্পর্ক অটুট থাকে। চিরদিন প্রতিটা ভাই বোন যেন একই সুতোয় গাথা মালা হয়ে থাকে। ভালো থাকুক , সুখে থাকুক, শান্তিতে থাকুক প্রতিটি ভাই-বোন। এ শুভ কামনায় আজ শেষ করছি আমার ছোট্ট এই নিবেদন। সঙ্গে থাকুন। ভালো থাকুন । নিরাপদে থাকুন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকুন।
''ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পরলো কাটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।
আগ বাজে , শাখ বাজে, আরো বাজে কাড়া।
আজ হতে ভাই তুমি না যাইও না যম পাড়া।।
এভাবে মুখে বলে আর কপালে ফোঁটা দেয় । ফোঁটা দেওয়ার পর শঙ্ক ধ্বনির মাঝে ধান দূর্বা দিয়ে ভাইকে আশীর্বাদ করে। তারপর মিষ্টিমুখ করার পালা আর এভাবেই গ্রাম-বাংলা, শহরতলীতে পালিতে হয় ভাই বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব ভাই ফোঁটা।
শেষ কথাঃ বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয় এ উৎসব । কিন্তু আজ তুলনামূলকভাবে এ উৎসব কম পালন করা হয়। এই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাই বোনের সম্পর্ক অটুট থাকে। চিরদিন প্রতিটা ভাই বোন যেন একই সুতোয় গাথা মালা হয়ে থাকে। ভালো থাকুক , সুখে থাকুক, শান্তিতে থাকুক প্রতিটি ভাই-বোন। এ শুভ কামনায় আজ শেষ করছি আমার ছোট্ট এই নিবেদন। সঙ্গে থাকুন। ভালো থাকুন । নিরাপদে থাকুন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url