কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গ্রাম বাংলার এক পরিচিত সবজি কাঁচা কলা। পেটের অসুখ থেকে শুরু করে শরীর গঠন, শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন উপাদান এই সবজিতে বিদ্যমান। সারা পৃথিবীতে এক হাজারের বেশি জাতের কলা উৎপন্ন হয় । কলাগাছ নেই এমন গ্রাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবচেয়ে সহজলভ্য খাদ্যের মধ্যে একটি হল কলা। যা গরিবের সবজি নামে পরিচিত। আজ জানবো কলা খাওয়ার নিয়ম , উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।
সূচিপত্রঃ কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
- কলার উৎপত্তিস্থল
- কলার কয়েকটি জাতের নাম
- কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম
- কাঁচা কলার উপকারিতা
- পুষ্টিগুণ
- কাঁচা কলার অপকারিতা
- শেষ কথা
কলার উৎপত্তিস্থলঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনের জঙ্গলে কলার উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সেখানে এখনো বিভিন্ন জাতের কলা জন্মে থাকে । এগুলো ভ্রমণকারীদের দ্বারা এশিয়া তথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
কলার কয়েকটি জাতের নামঃ কলার বীজের দিক থেকে দুই ধরনের কলা বিদ্যমান। এক বীজ মুক্ত, দুই বীজ যুক্ত কলা। বীজ মুক্ত কলা হলো শবরী, অমৃত সাগর, অগ্নিশ্বর, দুধ সাগর, দুধসর প্রভৃতি বীজযুক্ত কলা হলো চম্পা, চিনি চাম্পা, কবরী, চন্দন কবরি, জাপা কাটালি ইত্যাদি । এ ছাড়া এটে কলা , বাতুর আইটা, গোমা ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ যে ১২টি রোগের উপশম হবে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুনে
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়মঃ গ্রাম বাংলায় কাঁচা কলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করে থাকে। এসব খাবারের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ধরুন কাঁচা কলার বড়া, কাঁচা কলার চপ, কাঁচা কলার পিঠা এসব রং বেঙ্গের বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রাম বাংলায় তৈরি হয় । যার স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন আবার অনেকে আলুর পরিবর্তে অনেক সবজিতে কাঁচা কলা ব্যবহার করে থাকে। যা তরকারিতে সুস্বাদু বাড়ায়। তাছাড়া এই কাঁচা কলার বড়া , কাঁচা কলার চপ , কাঁচা কলার পিঠা এসব গ্রাম বাংলার হাটবাজারে অলিতে গলিতে বিক্রি হয় । প্রতিদিনের সবজিতে কাঁচা কলা রাখা ভালো । প্রতিদিন ২২০ গ্রাম থেকে ২৭০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে যা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে । তবে এটির পরিমাণ সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ ডায়েবেটিসিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা ভালো হবে।
কাঁচা কলার উপকারিতাঃ পাকা কলার যেমন বহু উপকারিতা আছে তেমনি কাচা কলার উপকারিতা ও কোন অংশে কম নয় । কাঁচা কলা সাধারণত সবুজ রঙের হয়ে থাকে । এতে পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন সি ,প্রো ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস , জিংক যৌগ গুলির মতো অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । তাই অযথা কথা না বলে জেনে নেই কাঁচা কলার উপকারিতা সম্পর্কে ।
আরো পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া বাচ্চার জন্য কতটা উপকারী
সুস্থ সবল হার্ট তৈরিতেঃ বর্তমানে হার্টের রোগ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যেটা কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপের কারণে হয়ে থাকে। কাঁচা কলায় হার্টে র স্বাস্থ্য ঠিক রাখার গুণ ও পাওয়া যায়।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁচা কলা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি খুবই উপকারী। এটি আঁশ যুক্ত হওয়াতে সহজে রক্তের শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভিটামিন বি ৬ গ্লকোজ নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পেটের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেঃ কাঁচা কলা আঁশ যুক্ত সবজি হওয়ায় এটি খুব সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কাঁচা কলা পেটের ভেতরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলো দূর করে দেয় । তবে অতিরিক্ত পেট ফোলার সমস্যা থাকলে এটা না খাওয়াই ভালো । মাঝেমধ্যে এটি কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যা ও অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কাঁচা কলাঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবার বেশি সময় পেট ভরিয়ে রাখে । এজন্য ঠিকমত ক্ষুধা ও পায়না। তাছাড়া এটি আঁশ যুক্ত হওয়ায় শরীরে মেদ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে কলায় এমন ধরনের স্টার্চ রয়েছে যা ক্যান্সারকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে ।ক্যান্সারের কোষগুলি ধ্বংস করে যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে সাহায্য করে । বলতে গেলে যদি কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাহলে তার চিকিৎসার জন্য এই ফল অনেকটা সাহায্য করতে পারে।
ত্বকের জন্য কাঁচা কলাঃ শরীর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কাঁচা কলা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। কলাতে অনেক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনের সমৃদ্ধ যা মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ব্রণের সমস্যা হতে মুক্তি দিতে পারে।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণঃ কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এটি । কিছু পুষ্টি উপাদান প্রতি 100 গ্রামে বর্ণিত হলো । যেমন, ক্যালরি - ৮৯ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন 1.09 গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট 22.84 গ্রাম , ফাইবার ২.৬ গ্রাম, চিনি ১২.২২ গ্রাম , ক্যালসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম ,পটাশিয়াম ৩৫৮ মিলিগ্রাম , ভিটামিন সি ৮.৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ৬ ০. ৩৬৭ মিলিগ্রাম।
আরো পড়ুনঃ বুক ধড়ফড় করা কি হৃদরোগের কারণ
কাঁচা কলার অপকারিতাঃ কাঁচা কলার উপকারিতা থেকে অপকারিতা খুবই কম। যদি নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণ মত খাওয়া হয় তাহলে অপকারিতা নেই বললেই চলে । কাঁচা কলায় ফাইবারের পরিমাণ 2.6 গ্রাম কিন্তু যদি কেউ বেশি পরিমাণে নিয়মিত কাঁচা কলা খায় তবে তাহলে তার পরিপাকতন্ত্রে ফাইবার হজমের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন পেটে গ্যাস ,পেট ফোলা ভাব পেটে অযথা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
শেষ কথাঃ কাঁচা কলা দৈনন্দিন জীবনে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি । এর গুনাগুন ও কোন অংশে কম নয়। আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই এই সবজিটির সাথে পরিচিত। কাঁচা কলাই এত উপকার যে তা বলে শেষ করা যায় না । ডায়রিয়া থেকে শুরু করে পেটের নানা ইনফেকশন দূর করে। ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কাঁচা কলা হলো সর্বোপরি পটাশিয়ামের ভাণ্ডার। যা শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে না সারাদিন শরীরকে সতেজ রাখে। শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায় । শরীরকে সতেজ রাখতে তাই আমাদের সর্বদা প্রতিদিনের সবজিতে এটা রাখা বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url