মহালয়া কি এবং কেন অজানা কিছু
হাজারও কোটি সনাতনীর বুকে লালন করা স্বপ্ন বুক ভরা আশা নিয়ে সেই প্রতীক্ষায় থাকা প্রতিটি বছরের ন্যায় আমাদের মাঝে কবে আসবে এই শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ আমরা জানাতে চলেছি মহালয়া ও দুর্গাপূজার জানা অজানা কিছু কথা।
মহালয়া কি এবং কেন এর সূচিপত্রঃ
- মহালয়া কি
- প্রথম মহালয়া কবে শুরু হয়
- মহালয়ায় তর্পনের সূচনা রহস্য
- মহালয়া কেন পালন করা হয়
- মহালয়ার গুরুত্ব কি
- মহালয়ের কতদিন পর পূজা শুরু
- শেষ কথা
মহালয়া কিঃ পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নে অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আলোক উজ্জ্বল দেবীপক্ষকে দুহাত তুলে বরণ করি। আর সেই মহা লগ্ন আমাদের জীবনে মহালয়া। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়।বোধন অর্থ জাগরণ। মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান আলোয় বা আশ্রম। এজন্য দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলোয়।
প্রথম মহালয়া কবে শুরু হয়ঃ এ অনুষ্ঠানটি কলকাতার আকাশবাণীতে ১৯৩১ সালে প্রথম সম্প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি পঙ্কজ কুমার মল্লিক , বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় এবং রায়চাঁদ বড়াল দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল । এনারা সবাই সেই সময় কলিকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন । যাদের মাধ্যমে আজ আমরা আজকের এইদিনে মহালয়া অনুষ্ঠানটি ভালো হবে উপলব্ধি করতে পারছি।
মহালয়ায় তর্পনের সূচনা রহস্যঃ শাস্ত্রবিজ্ঞান অনুসারে এই অমাস্যাতেই পিতৃ পুরুষদের আত্মা সর্গলোক থেকে মর্তে নেমে আসেন আর সেই পিতৃ-পুরুষদের বংশধারারা তর্পণ করে থাকে । আর এই মহাসমাবেশ কে বলা হয় মহালয়া । আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবিপক্ষ , আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষ অর্থাৎ পিতৃপক্ষ এবং শুক্ল-পক্ষ অর্থাৎ দেবিপক্ষের এই সন্ধ্যিকালের সময়টিকে ধর্মপ্রাণ সনাতনীদের কাছে বিশেষ একটি দিন ।আর এই দিনটি হল মহালয়া।
মহালয়া কেন পালন করা হয়ঃ সনাতন ধর্ম মতে বছরে একবার স্বর্গীয় পিতা মাতার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করতে হয়। সেই তিথিতে করতে হয় , যে তিথিটা ওনারা প্রায়ত হয়েছেন । সনাতন ধর্মের সবকাজ কোন তারিখ অনুসরণ করা হয় না, তিথী নক্ষত্র অনুসরে করতে হয় । মহালয়াতে যারা পবিত্র গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য, তাহারা শুধু পূর্ব পুরুষদের নয় পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন । যাদের সন্তান নেই যাদের দুনিয়াতে কেউ নেই মহালয়ের দিন স্মরণ করার। তাদের জন্য অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । এভাবেই যাদের পিতা-মাতা বন্ধু- বান্ধব কেউ নেই আজ স্মরণ করার ।তাদেরকেও স্মরণ করছি ও প্রার্থনা করছি তাদের আত্মা তৃপ্তি লাভ করুক।
মহালয়ার গুরুত্ব কিঃ কোটি বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব এই দুর্গাপূজা। এটি বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই পূজার একটা ভাব চলে আসে বাঙ্গালীদের মনে। শুরু হয় হই হই রই রই পুজো পুজো গন্ধ। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই বিশেষ দিনে মহিষাসুর কে বধ করেছিলেন । মহালয়ার দিনেই এই অশুভশক্তির বিনাশ ঘটিয়ে এবং শুভ শক্তির আরাধনা। মহালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম মহালয়া হলো সনাতনী বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন।
মহালয়ের কতদিন পর পূজা শুরুঃ মহালয়ের পর ষষ্ঠ দিনে দুর্গাপূজা শুরু হয় যা দেবীর বোধন দিয়ে মহাষষ্ঠী নামে পরিচিত। এভাবে মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার পূজা শেষ হয়। এক বিশাল উদযাপনের মধ্য দিয়ে এই দুর্গাপূজা পালিত হয়।
শেষ কথাঃ পরিশেষে মহালয়ায় পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ শ্রাদ্ধ একটি শাস্ত্রীয় সম্মত হলেও একটি সার্বজনীন ।ধনী-গরিব জ্ঞানী-গুণী থেকে অতি সাধারণ তর্পণকারীর শ্রদ্ধার্ঘ্য অঞ্জলি পারিবারিক ভাবে শেষ করে দেশ ও কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র পৃথিবীর প্রয়াত মানুষদের প্রতি অর্পিত হচ্ছে । আমরা এই দিনের জন্য প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি। এই দিন কবে আসবে। মহালয়া সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি। সবাইকে মহালয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই বিষয়টি। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ভালো থাকবেন ।পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url