কোজাগরী লক্ষী পূজার জানা অজানা কিছু কথা জানুন-2023
''এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে '' । লক্ষ্মী পূজার আরধনায় এই প্রার্থনায় প্রতিটি বাঙালির গৃহকোণে। লক্ষ্মী হলেন ধনসম্পদ সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। মা লক্ষ্মী সন্তুষ্ট থাকলে গৃহে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ থাকে, ব্যবসায় বাণিজ্যে উন্নতি হয়, গৃহের প্রত্যেকের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ একটি বছরের জন্য শুভকামনা বয়ে আনে। কোজাগরী পূর্ণিমার দিনে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পূজিত হন মা লক্ষ্মী। আজ আমরা জানবো কোজাগরী লক্ষী পূজার জানা অজানা কিছু কথাা ।
- কোজাগরী লক্ষ্মীপূজো কি
- লক্ষ্মী পূজার উপকরণ
- লক্ষী পূজোয় আলপনা
- মা লক্ষ্মীর প্রিয় ফল
- লক্ষী পূজায় কোন কাজগুলো করা উচিত নয়
- মনোবাসনায় মা লক্ষ্মী
- লক্ষ্মী দেবীকে কি কি অর্পণ করতে হয়
- ২০২৩ সালের লক্ষী পূজা কবে
- শেষ কথা
কোজাগরি লক্ষী পূজো কিঃ কোজাগরী শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে কো- জাগতী থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ হলো '' কে জেগে আছো '' । জানা যায়, কোজাগরি লক্ষী পূজোর দিনে মা লক্ষ্মী স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে আসেন। এবং সকলের বাড়ি বাড়ি যেয়ে আশীর্বাদ করেন। কিন্তু সে দিনে যে বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে সে বাড়িতে মা লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না। সেখান থেকে ফিরে চলে যান । তাই লক্ষ্মী পূজার রাতে জেগে থাকার একটা রীতি প্রচলন আছে । অর্থাৎ সারারাত জেগে মা লক্ষ্মীর প্রার্থনা করাটাই এই পূজার মূল উদ্দেশ্য। আবার অনেকে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনে অন্যের বাগান থেকে ফল বা শস্যাদি চুরি করে থাকেন এর ফলে লক্ষ্মী তাদের আশীর্বাদ দেবেন।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপূজা সম্পর্কে জানা অজানা কিছু তথ্য
লক্ষী পূজার উপকরণঃ মা লক্ষ্মী হলেন ধন-সম্পদ, সৌভাগ্যের দেবী। প্রত্যেকে ঘরে ঘরে ধনসম্পত্তি যশ, মান খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য দেবী লক্ষীর পূজা করে থাকেন। মা লক্ষ্মীর পূজায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী উপকরণ প্রয়োজন। যা মা লক্ষ্মীর পূজায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যা না হলে পূজা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
মা লক্ষ্মী পূজোর সকল উপকরণের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
- পান
- সুপারি
- ফুলের মালা
- নারকেল
- হরিতকি
- পাঁচ রকম ফল
- মিষ্টি
- তিল
- এক সরা
- ঘট
- কুন্ড হাঁড়ি
- দর্পণ
- আতপ চাল
- ঘট আচ্ছাদনের একটি গামছা
- পঞ্চগুড়ি
- পঞ্চরত্ন
- সশীষ ডাব একটি
- তীর কাঠি
- পুষ্প
- দুর্বা
- মধুপর্কের বাটি
- খড়ি মাটি
- চাঁদ মালা
- লোহা
- শাঁখা পলা
- নথ
- সিঁদুর চুবড়ি
- নারায়ণের একটি ধুতি
- মা লক্ষ্মীর একটি শাড়ি
- নৈবেদ্য
- দধি
- মধু
- সিঁদুর
- কর্পূর
- ভোগের দ্রবাদি
- গব্য ঘৃত
- পানের মশলা
- থালা
- ঘটি
- দক্ষিণা
লক্ষী পূজোয় আলপনাঃ লক্ষ্মীপূজো অর্থ হলো বাংলার ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের আলপনা। যে চৌকাঠ পেরিয়ে মা লক্ষ্মী ঘরে প্রবেশ করেন সেখানে আকা হয় তার পায়ের ছাপ । লক্ষী পূজার সময় অবশ্যই আলপনা আঁকতে হয় । আলপনাতে দেবীর পায়ের ছবি আঁকা হয় পাশেই মঙ্গল ঘট স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মহালয়া কি এবং কেন অজানা কিছু
মা লক্ষ্মীর প্রিয় ফলঃ যে ফল না হলে মা লক্ষ্মী তার পূজায় অসন্তুষ্ট থাকেন। তাই লক্ষ্মীপূজায় এই ফল অবশ্যই প্রয়োজন। বিশেষ করে মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য । মা লক্ষ্মীর প্রিয় ফল হল নারকেল। আর এজন্যই নারকেল কে শ্রীফল ও বলা হয়। লক্ষী পূজায় প্রসাদ হিসাবে নারকেল এবং নারকেলের তৈরি মিষ্টি নিবেদন কর হয়।
লক্ষী পূজায় কোন কাজগুলো করা উচিত নয়ঃ লক্ষী পূজায় যে কাজগুলো করা উচিত নয় তা এক নজরে জেনে নেই।
- লক্ষী পূজায় কোনোভাবেই তুলসী পাতা প্রদান করা যাবেনা।
- লক্ষী পূজায় ভুল করেও কাঁসার ঘন্টা বাজাতে নেই।
- লোহার তৈরি কোন বাসনপত্র মা লক্ষ্মী পূজায় ব্যবহার করা একদম নিষিদ্ধ। কারণ লোহার বাসনপত্র অলক্ষী পূজায় ব্যবহার করা হয়।
- লক্ষীপূজায় সাদা ফুল ব্যবহার করা যাবে না। লাল , গোলাপি রঙের ফুল মাকে অর্পণ করতে হয়।
- পুজোর সময় নিজেকে অবশ্যই লাল কিম্বা হলুদ বস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
- ধুপ দ্বীপ অবশ্যই মায়ের ডান পাশে রাখতে হবে।
মনোবাসনায় মা লক্ষ্মীঃ সঠিক নিয়মে যদি লক্ষ্মী পুজো করা হয় তাহলে তার কৃপা খুব সহজেই পাওয়া যায়। কারো আরাধনায় যদি তিনি সন্তুষ্ট হন তাহলে সংসারে ধন-সম্পত্তিতে ভরে ওঠে। মা লক্ষীর পূজো সম্মান যশের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সুস্থতা ও আসে। বৃহস্পতি হল লক্ষ্মীর প্রতীক। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন শুদ্ধ বাসনে মায়ের আরাধনা করলে লটারিতে অর্থ লাভ হতে পারে। ব্যবসার উন্নতি হয়, মন মত চাকরি লাভ হয় ,সুস্থ সমৃদ্ধি লাভ হয় শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে ।
আরও পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র মতে সহবাস করার নিয়ম
লক্ষী দেবী কে কি কি অর্পণ করতে হয়ঃ কথায় বলে লক্ষ্মীদেবী যেহেতু চঞ্চলা প্রকৃতির তাই তাকে নিজের বাড়িতে এই জিনিসগুলো অর্পণ করতে হয়। যাতে আপনার সংসারে চিরতরে থাকেন। যাহাতে
আপনার পরিবারকে সুখ-সমৃদ্ধি ও ধনধান্যে ভরিয়ে রাখেন। সে ব্যবস্থা কিন্তু আপনাকে করতে হবে।
পান পাতাঃ প্রায় সব পুজোতেই পান পাতা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিশেষভাবে নারায়ণ ও লক্ষী পূজোয় পান পাতা ব্যবহার অনিবার্য। পান পাতা ব্যবহার করলে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন।
সুপারিঃ লক্ষী পূজোয় সুপারি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে ।পান পাতার ওপর একটি সুপারি দিলে মা লক্ষ্মী খুব খুশি হন।
কলাপাতাঃ লক্ষী দেবীর নৈবেদ্য যদি কলাপাতার অগ্রভাগে অর্পণ করা হয় তাহলে তিনি এতটাই সন্তুষ্ট হন যে সারা জীবন সেই বাড়িতে অবস্থান করেন। এজন্য আমরা সবাই লক্ষ্মী পূজাতে কলাপাতা ব্যবহার করে থাকি।
আরও পড়ুনঃহিন্দুধর্মে হস্তমৈথুন ও যৌনতায় নিয়ন্ত্রণ
বেলপাতাঃ বেলপাতা লক্ষ্মীর অন্যতম প্রিয় বস্তু । যদি লক্ষ্মী দেবীকে বেলপাতা অর্পণ করা হয় তাহলে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। তবে অবশ্যই তিনটি পাতা যেন নিখুঁত হয়।
আম পাতাঃ লক্ষ্মী দেবীর ঘটে আম পাতা দেওয়া হয় এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন পাঁচটি পাতা একটি ডাটায় থাকে। এবং পাতাগুলো নিকট হয়। এ পাতায় আবার সিঁদুর দেওয়া হয়।
দুর্বাঃ লক্ষ্মী দেবীকে সন্তুষ্ট করতে হলে তার পুজোয় দুর্বা অবশ্যই ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া শাস্ত্রমতে আমরা যখন লক্ষ্মীপূজায় লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ি তখন অবশ্যই দুর্ব হাতে রাখতে হয়।
ঘিয়ের প্রদীপঃ লক্ষ্মী প্রতিমা বা পটের সামনে দুটি ঘি এর প্রদীপ জ্বালালে খুবই ভালো। এর সাথে পদ্ম নারকেল ও ক্ষীরের নৈবেদ্য দিলে লক্ষ্মী দেবী প্রসন্ন হন।
কড়ি এবং শঙ্খঃ ঠাকুরঘরে বা সিংহাসনে কড়ি এবং শঙ্খ রাখা খুবই শুভ । এতে বাড়ির কল্যাণ হয়।
২০২৩ সালের লক্ষ্মী পূজা কবেঃ পঞ্জিকা অনুসারে 29 অক্টোবর ২০২৩ রোজ রবিবার কোজাগরী লক্ষীপূজা পড়ছে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেদিন ১০ কার্তিক ১৪৩০। পূর্ণিমা শুরু হবে ২৮শে অক্টোবর বা 9 কার্তিক রাত তিনটা ৪২ মিনিটে এবং পূর্ণিমা ছেড়ে যাবে ২৯ অক্টোবর বা ১০ কার্তিক রাত একটা ৫৬ মিনিটে । উদয়া তিথি অনুসারে কোজাগরী লক্ষী পূজা পালিত হবে 29 অক্টোবর।
শেষ কথাঃ পরিশেষে একটাই কথা বলতে হয়, সঠিকভাবে নিয়ম মেনে একগ্রো চিত্তে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করলে ধন-সম্পদ সমৃদ্ধি লাভ হয়। তাছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মীর পূজা করে পাঁচালী পড়লে মা লক্ষ্মী সন্তুষ্টি হন। সর্বদা গৃহে ধনসম্পদ স্বাস্থ্য সমৃদ্ধি বজায় থাকে। তাই আমরা সকলে মা লক্ষ্মীর পূজা করে তাকে সন্তুষ্ট বিধানে নিয়মিত হই। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।ভাল থাকবেন। পুষ্পিতা আইটির সাথে থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url